ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রির সময় শেষ : অবিক্রীত টিকিট পাওয়া যাচ্ছে কাউন্টারে
আমার নিউজ ডেক্স: ঈদ উপলক্ষে পাঁচ দিনব্যাপী ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রির শেষ দিন ছিল শুক্রবার। এদিন ১১ আগস্টের টিকিট বিক্রি হয়। গত ৫ দিনে (২৯ জুলাই থেকে ২ আগস্ট পর্যন্ত) কমলাপুরসহ রাজধানীর চারটি স্টেশন কাউন্টার থেকে ৩৪টি আন্তঃনগর ট্রেনের বিপরীতে ৬১ হাজার ৪০টি অগ্রিম টিকিট বিক্রি হয়েছে।
এর মধ্যে অনলাইন ও রেল অ্যাপসে বিক্রি হয় ৫৫ হাজার ৯০৯টি টিকিট। আর অনলাইন-রেল অ্যাপস ও কাউন্টার মিলিয়ে ৫ দিনে বিক্রি হয়েছে ১ লাখ ১৬ হাজার ৯৪৯টি টিকিট। এদিকে ৪টি ঈদ স্পেশাল ট্রেনের জন্য ৫ দিনে ১৩ হাজার ২৬৫টি টিকিট বরাদ্দ ছিল, যা শুধু কাউন্টার থেকে বিক্রি করা হয়। ঈদ স্পেশাল ট্রেনের টিকিট অনলাইন-রেল অ্যাপসে দেয়া হয়নি।
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানায়, এখনও ঢাকা-সিলেটসহ বিভিন্ন রুটে চলা ট্রেনের অগ্রিম টিকিট অবিক্রীত রয়েছে। অনলাইন ও রেল অ্যাপসে যেসব টিকিট বিক্রি হয়নি সেই টিকিট এখন কাউন্টার থেকে বিক্রি হচ্ছে। যে কেউ কাউন্টার থেকে অবিক্রীত টিকিট কিনতে পারবেন। কেবিন কিংবা এসি চেয়ারের সিট নেই। গত ৫ দিনে ১ লাখ ১৬ হাজার ৯৪৯টি টিকিট বিক্রি হয়েছে। আরও টিকিট কাউন্টারে আছে। যারা টিকিট কাটতে পারেননি তাদের সুবিধার্থে শুধু যাত্রার দিন ট্রেনপ্রতি ৩০ শতাংশ সিটবিহীন টিকিট বিক্রি করা হবে।
কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ম্যানেজার আমিনুল হক জুয়েল দাবি করেন, ‘অগ্রিম টিকিট কাটার শেষ দিন (শুক্রবার) লাইনে দাঁড়ানো প্রায় সবাই টিকিট কাটতে পেরেছেন। লাইনে কম লোক থাকায় সবার ভাগ্যে টিকিট জুটেছে।
এর আগে সীমিত টিকিটের বিপরীতে ৪-৫ গুণ লোক দাঁড়ানোর কারণে অনেকের ভাগ্যেই টিকিট জোটেনি। তবে আমরা অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে টিকিট বিক্রি সম্পন্ন করেছি।
এখনও অনেক টিকিট রয়েছে, বিশেষ করে ঢাকা-সিলেট রুটসহ বেশ কয়েকটি রুটের। কেবিন সিট-এসি চেয়ার সিট নেই, সাধারণ সিট রয়েছে। যে কেউ কাউন্টার থেকে সাধারণ এসব সিটি কাটতে পারবেন।’
রেলওয়ে মহাপরিচালক শামছুজ্জামান যুগান্তরকে বলেন, ‘অগ্রিম টিকিট বিক্রির শেষদিন আমরা সুষ্ঠুভাবে টিকিট বিক্রি করতে পেরেছি। ৭ আগস্ট থেকে অগ্রিম টিকিট কাটা যাত্রীদের যাত্রা শুরু হবে। ঈদে অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে ট্রেন চালাতে হয়।
এ জন্য অতিরিক্ত ইঞ্জিন ও খালি যাত্রীবাহী বগি বিভিন্ন স্টেশনে রেখেছি, যাতে যে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে দ্রুত ইঞ্জিন ও বগি দিয়ে সমস্যা সমাধান করতে পারি।’ তিনি বলেন, ‘ট্রেনে ছাদে ওঠা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। আমরা চেষ্টা করব কোনো যাত্রী যাতে ট্রেনের ছাদে না উঠতে পারে। এ জন্য সাধারণ যাত্রীদের সহযোগিতা চাই।’
ঈদের সময় যে চিত্র লক্ষ করা যায় তা হল- সিটবিহীন টিকিটধারী ও টিকিটবিহীনদের কারণে আসনপ্রাপ্ত যাত্রীরা ট্রেনে উঠতে পারেন না। কখনও কখনও ট্রেনে উঠতে পারলেও নিজের সিট পর্যন্ত যেতে পারেন না। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ শুধু কেবিন ও এসি সিট বগিগুলোতে যাত্রীদের নিরাপত্তা দেয়। বিনা টিকিটি কিংবা আসনবিহীন টিকিটধারীদের এসব বগিতে প্রবেশ করতে দেয় না। তাই এসব বগিতে আরামেই ভ্রমণ করতে পারেন যাত্রীরা। কিন্তু বাকি বগিগুলোতে লোকজন ইচ্ছেমতো উঠে পড়েন। যাত্রী চাপ এতই থাকে যে সাধারণ বগিগুলোতে কর্তৃপক্ষের কোনো নিয়ন্ত্রণই থাকে না। এসব বগিতে বিনা টিকিটধারীদেরই দৌরাত্ম্য বেশি থাকে। ফলে টিকিট কেটে পরিবার পরিজন নিয়ে যারা ভ্রমণ করেন তারা পড়েন চরম ভোগান্তিতে।
শুক্রবার কাউন্টারের সামনে দাঁড়ানো টিকিট প্রত্যাশীদের চোখে-মুখেও ছিল ক্লান্তির ছাপ। বেশির ভাগ টিকিট প্রত্যাশী বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে কাউন্টারের সামনে দাঁড়ান। শেষ দিনের টিকিট কাটতে আসা যাত্রীদের ভাগ্যে কেবিন, এসি চেয়ারের সিট মেলেনি বলে অভিযোগ রয়েছে। বনলতা এক্সপ্রেসের টিকিটের জন্য লাইনে দাঁড়ানো জিল্লুর রহমান নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘বৃহস্পতিবার বিকালে লাইনে দাঁড়িয়েছি এসি টিকিটের জন্য। সকাল সোয়া ৯টার দিকেও (শুক্রবার) কেবিন সিট কিংবা এসি চেয়ারের কোনো সিট পাইনি।’ আরও অনেকেই এমন অভিযোগ করেছেন।
কর্তৃপক্ষ বলছে, রেলে প্রতিদিন দুই লাখ ৭৭ হাজার মানুষ চলাচল করলেও ঈদের সময় তা বেড়ে প্রায় পৌনে ৫ লাখে দাঁড়ায়। এর মধ্যে রাজধানীর কমলাপুর ও বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন দিয়ে প্রায় দেড় লাখ যাত্রী চলাচল করে। অথচ ৫ দিনে মোট টিকিট বিক্রি হয়েছে ১ লাখ ১৬ হাজার। যদিও পাঁচ দিনে যাবে সাড়ে ৭ লাখের বেশি যাত্রী। এ কারণে প্রচণ্ড চাপ সামলাতে হবে রেলওয়েকে।
ফিরতি অগ্রিম টিকিট : ঈদ শেষে ৫ আগস্ট দেয়া হবে ১৪ আগস্টের ফিরতি অগ্রিম টিকিট। ৬ আগস্ট দেয়া হবে ১৫ আগস্টের, ৭ আগস্ট দেয়া হবে ১৬ আগস্টের, ৮ আগস্ট ১৭ আগস্টের এবং ৯ আগস্ট ১৮ আগস্টের অগ্রিম টিকিট দেয়া হবে।