নরসিংদী প্রতিনিধিঃ আঁধার আলো করে যখন প্রিয় সন্তান ভূমিষ্ট হয় তখন পিতামাতা ও আত্মীয় স্বজনের মাঝে নেমে আসে আনন্দ উচ্ছাস। কিন্তু প্রিয় সন্তান যদি প্রতিবন্ধী হয় তখণ পিতামাতার মাঝে নেমে আসে চরম হতাশা। সন্তানদের মানুষ করা নিয়ে অভিভাবকরা পরে যান দুশ্চিন্তায় এমনকি কখনো কখনো স্বীকার হন বৈষম্যের এবং বঞ্চিত হন তাদের প্রাপ্য অধিকার হতে। ফলে তাদের ভবিষ্যৎ পড়ে যায় অনিশ্চয়তার চাদরে ঢাকা।সেই প্রতিবন্ধী সন্তানদের মানুষ করতে আর দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে নরসিংদীর মনোহরদীতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে অর্জুনচর শিকদার বাড়ী বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক বিদ্যালয়। ২০১৫ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে এ বছর প্রতি শিক্ষকদের নিজস্ব অর্থায়নে চলছে বিদ্যালয়টি। উপজেলার প্রায় সকল ইউনিয়ন থেকে ৮০ জন শিক্ষার্থী অত্র বিদ্যালয় এসে থাকেন। শিক্ষার্থীদেরকে বিদ্যালয়ে নিয়ে আসার জন্য রয়েছে বিদ্যালয়ের নিজস্ব একটি গাড়ি। যে গাড়ি দিয়ে দৈনিক বিভিন্ন এলাকা থেকে শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে নিয়ে আসা হয়। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সারোয়ার শিকদার রাব্বি জানান, বীর মুক্তিযোদ্ধা আমজাদ হোসেন শিকদার সমাজ কল্যাণ সংস্থা কর্তৃক বিদ্যালয়টি পরিচালিত হয়ে আসছে। বিদ্যালয়ে মোট ১০ জন শিক্ষক, ৭ জন সহকারী শিক্ষকসহ একজন দপ্তরী এবং ১জন ড্রাইভার রয়েছে। জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন কর্তৃক ট্রেনিং প্রাপ্ত শিক্ষকমন্ডলী শিক্ষার্থীদেরকে ছড়া, কবিতা, গান, নাচসহ শিক্ষার্থীদের পছন্দনীয় বিষয় দিয়ে শিক্ষা প্রদান করে থাকেন।প্রত্যেকটি শিক্ষার্থীদেরকে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তোলার জন্য লেখাপড়ার পাশাপাশি বিভিন্ন উপকরণ তৈরি শিক্ষা দেওয়া হয়। ৪ বছর থেকে শুরু করে ২৫ বছর পর্যন্ত বয়সী শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বিদ্যালয় কর্তৃক কোন টিউশন ফি নিচ্ছেন না। বীর মুক্তিযোদ্ধা আমজাদ হোসেন শিকদার ২০ শতাংশ জমি অত্র বিদ্যালয়ের জন্য দান করে দিয়েছেন। সরেজমিনে বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করে দেখা যায় বিদ্যালয়ের জন্য নির্মিত টিন সেটের ঘরে রয়েছে তিনটি শ্রেণিকক্ষ। শ্রেণিকক্ষের শ্রেণি টিনের বেড়ায় বিভিন্ন নীতিবাক্য আর রং বেরংয়ের বর্ণমালা দিয়ে সাজানো হয়েছে। বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষের সুপিকে সাজিয়ে রাখা হয়েছে শিক্ষার্থীদের সহযোগিতায় শিক্ষাথীদের তৈরি সুন্দর প্রসাধনী সহ বিভিন্ন বস্তু। বিদ্যালয়ের অভিভাবকদের সাথে কথা বলে জানা যায় এক সময় তাদের সন্তানেরা ঘরে পড়ে থাকত। বিদ্যালয়ে যেত না কিন্তু এখানে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে আমাদের ছেলেমেয়েরা নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসে এবং আনন্দ চিত্তে শিক্ষা গ্রহণ করে। বিদ্যালয়ের প্রধান জানান সকাল ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত বিদ্যালয়টির কার্যক্রম চলে। সংবাদদাতার সাথে আলোচনাকালে তিনি বিদ্যালয়ের সমস্যা নিয়ে জানান, পর্যাপ্ত চিকিৎসার পাশাপাশি প্রতিবন্ধী ভাতা থেকেও বঞ্চিত। দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য ব্রেইল পদ্ধতি না থাকায় তাদের শিক্ষাদানও সমস্যা হচ্ছে। তিনি আরো জানান সংশ্লিষ্ট সংস্থার বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা পেলে এক সময় এই বিদ্যালয়ের মাধ্যমে প্রতিবন্ধীরা দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তরিত হয়েছে এবং সমাজের বোঝা হয়ে থাকবেনা।