আমার নিউজ ডেক্স: রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ডেঙ্গুজ্বরের প্রকোপ অব্যাহত আছে। শুক্রবারও রোগীতে ঠাসা ছিল সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলো। যদিও সরকারি হিসাবে হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী ভর্তির সংখ্যা বুধবারের তুলনায় কমেছে ৩২৪ জন।
তবে গত ২৪ ঘণ্টায় ২০০২ জন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন। পাশাপাশি এদিন চার শিশুসহ আরও ১১ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এ নিয়ে বেসরকারি হিসাবে চলতি মাসের প্রথম ৯ দিনে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৪। সরকারি হিসাবে গত ১ জানুয়ারি থেকে মৃতের সংখ্যা ২৯ জন।
স্বাস্থ্য অধিদফতর শুক্রবার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ও ছাড়পত্র নেয়া রোগীদের তিনদিনের তুলনামূলক তথ্য প্রকাশ করেছে। এতে সংস্থাটি জানিয়েছে, ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী গত ৩ দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তির প্রবণতা কমছে। পাশাপাশি বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীদের হাসপাতাল ছাড়ার সংখ্যা। হাসপাতালে ভর্তি রোগীর মধ্যে ঢাকার বাইরেই বেশি।
সরকারি হিসাবে গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছে ৯৪৭ জন। বাকি ১ হাজার ৫৫ জন ঢাকার বাইরে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
এদিকে ডেঙ্গু প্রতিরোধে তৎপরতা আরও জোরদার করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ঈদে ডাক্তার ও নার্সদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। শুক্রবার রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডাক্তার ও নার্সদের ঈদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
কমিউনিটি হেলথ প্রোভাইডাররা ঈদের ছুটিতে দায়িত্ব পালন করবেন বলে ঘোষণা এসেছে। এদিন আওয়ামী লীগের ৬৪টি মনিটরিং টিম গঠন করা হয়েছে। ঢাকায় একটি কেন্দ্রীয় মনিটরিং সেলও গঠন করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম বলছে, বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত সারা দেশে ২ হাজার ২ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আগের ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে এ সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৩২৬ জন। ৭ থেকে ৮ আগস্ট সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ছিলেন ২ হাজার ৪২৮ জন।
এ তথ্য বিশ্লেষণ করে অধিদফতর বলেছে, ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা কমছে। বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ৩৬ হাজার ৬৬৮ জন ডেঙ্গু রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। শুক্রবার সকাল নাগাদ সারা দেশে ৮ হাজার ৭৬৩ জন রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। এর মধ্যে ঢাকার ৪০টি সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ৫ হাজার ৭৬ জন। জেলা পর্যায়ে বিভিন্ন হাসপাতালে বাকি ৩ হাজার ৬৮৭ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্তদের মধ্যে ঢাকা বিভাগের জেলাগুলোতেই সবচেয়ে বেশি রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ সংখ্যা ২৩৮ জন। আগের দিন ছিল ২৮৩ জন। এছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগে ২২৩ জন, খুলনায় ১৪৯ জন, বরিশালে ১৬৭, রাজশাহীতে ১০৪, ময়মনসিংহে ৭০, রংপুরে ৭৫ এবং সিলেটে ২৯ জন ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
তবে বেসরকারি সূত্রগুলো বলছে, ডেঙ্গু আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশি। কেননা, হাসপাতালে বেড সংকুলান না হওয়ায় অনেকেই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে নিজেদের স্বজনকে বাসায় রেখেছেন। সেই হিসাবটা সরকারি প্রতিবেদনে স্থান পায়নি।
কয়েক মাসের মধ্যে আগস্টের ৮ দিনে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এপ্রিলে ৫৮ জন ভর্তি হলেও মে’তে ১৯৩ জন, জুনে ১৮৮৪ জন হাসপাতালে ভর্তি হন। জুলাইয়ে তা এক লাফে ১৬ হাজার ২৫৩ জনে পৌঁছে। আগস্টের প্রথম ৮ দিনে এ সংখ্যা গিয়ে ঠেকেছে ১৮ হাজার ২০৭ জনে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের শুক্রবারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার সংখ্যাও বাড়ছে। এরই মধ্যে ৭৫ শতাংশ রোগী বাড়ি ফিরে গেছেন। গত ৩ দিনে ছাড়পত্র পাওয়া রোগীর সংখ্যা বেড়েছে ৩৬ শতাংশ।
শুক্রবারের সরকারি প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ২৯ জন মারা গেছেন।
ঈদে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো খোলা থাকছে : বাসস জানায়, পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে সরকারি ছুটি থাকার পরও দেশব্যাপী গ্রাম পর্যায়ের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো খোলা থাকছে।
সরকারি তথ্য বিবরণীতে বলা হয়েছে, সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শুক্রবার থেকে (ঈদের দিন ছাড়া) আগামী ১৭ আগস্ট পর্যন্ত দেশের সব কমিউনিটি ক্লিনিক চালু থাকবে। এছাড়াও সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভাগুলো মশা নিধন কর্মসূচি প্রতিদিনই অব্যাহত রাখবে।
এছাড়া ঈদের ছুটির সময় যেন অফিস বা তার চারপাশে কোনো পানি জমে না থাকে সেদিকে দৃষ্টি দিয়ে এডিস মশা ও লার্ভা নিধন কার্যক্রম নিয়মিত তদারকি করতে সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও দফতরগুলোকে ইতিমধ্যেই মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে অফিসিয়ালি নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকেও স্কুল-কলেজসহ দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অফিস খোলা রেখে ঈদের ছুটির দিনগুলোতে পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।