ঝিনাইদহে হঠাৎ শিলাবৃষ্টিতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বৃষ্টিতে গম, ভূট্টা, মসুর, পেঁয়াজ, মটর, আলু মটর, রবিশস্যসহ আম ও লিচুর মুকুল ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। রোববার (২৭ ফেব্রুয়ারী) বিকাল সাড়ে ৪টায় হঠাৎ ঝড়ো হাওয়ার সাথে শিলাবৃষ্টি বয়ে যায় ঝিনাইদহ জেলার ৪টি উপজেলার উপর দিয়ে। শিলাবৃষ্টির সাথে ঝড়ে এ ক্ষতিসাধিত হয়েছে।
সরোজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রোববারের ঝোড়ো হাওয়ার সাথে শিলাবৃষ্টিতে সদর, কালীগঞ্জ, কোটচাঁদপুর ও মহেশপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের মাঠে থাকা ফসল ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। মাটির সাথে মিশে গেছে গম, মসুর, ভূট্টাসহ অন্যান্য ফসল। ফসলের ক্ষতি ছাড়াও লিচু ও আমের মুকুল ঝরে গেছে। ক্ষতি হয়েছে শাকসবজিরও। ক্ষতিগ্রস্থ প্রান্তিক কৃষকরা সরকারের কাছ থেকে আর্থিক সহায়তা কামনা করছেন।
ঝিনাইদহ কৃষি সম্প্রাসারণ অধিদপ্তর থেকে জানাযায়, গত রোববার বিকালে শিলাবৃষ্টির কারনে জেলায় বিভিন্ন ধরনের ফসলের ক্ষতি হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে যে ক্ষতি হয়েছে তা কৃষকের পক্ষে পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়। জেলাতে ৫২ হাজার ১শত ২২ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন ধরের ফসলের আবাদ করা হয়েছে। গতকালের শিলাবৃষ্টির কারনে ৭শত ১৮ হেক্টরের বেশি জমিতে ব্যাপক পরিমাণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফসলের মধ্যে, ৪ হাজার ২শত ৭৮ হেক্টর জমিরতে গমের আবাদ হয়েছিল, তার মধ্যে ১শত ১২ হেক্টর জমিতে দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ভূট্টা আবাদ ১৭ হাজার ৭শত ৯১ হেক্টর জমির মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৪শত ৮৬ হেক্টর, পেঁয়াজ ১০ হাজার হেক্টরে মধ্যে ৩০ হেক্টর, মসুর ৭ হাজার ৪শত ৬৯ হেক্টর জমির মধ্যে ৬৩ হেক্টর, মটর ৪শথ ৫২ হেক্টরের মধ্যে ৩ হেক্টর, রসুন ২ হাজার ৫শত ৭১ হেক্টরের মধ্যে ৩ হেক্টর, ধনিয়া ২শত ১৮ হেক্টরের মধ্যে ৮ হেক্টর, ড্রাগন ১শত ৫১ হেক্টরের মধ্যে ৩ হেক্টর, কলা ৫ হাজার ৫শত ৯৫ হেক্টর জমির মধ্যে ২ হেক্টর, আলু ১ হাজার ৫শত ৬২ হেক্টরের মধ্যে ৫ হেক্টর, ফুল ১শত ৫৬ হেক্টরের মধ্যে ২ হেক্টর ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এছাড়াও আম লিচু, টমেটোসহ সব ধরের ফসলের আংশিক ক্ষতি হয়েছে বলেও জানাযায়।
এছাড়াও জেলার সদর উপজেলায় ৫শত ৩৬ হেক্টর, মহেশপুর ১শত ৫হ হেক্টর ও হরিণাকুন্ডু উপজেলাতে ২০ হেক্টর ফসলের বেশি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে।https://youtu.be/2E-Krgv33qA
সদর উপজেরার খাজুরা গ্রামের কৃষক আব্দুল কাদের জানান, তার ১৪ বিঘা জমিতে ২ হাজার ৫শত কলা ছিল। তারমধ্যে ১ হাজার কলাগাছ ঝড়ে ভেঙে গেছে। যার ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২ লক্ষ ৫ হাজার টাকার উপরে। এছাড়াও মসুরি ও গমের ব্যাপক পরিমাণে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে সরকার যদি তাদের কোন প্রণোদনা দেয় তাহলে নতুন করে আবার চাষাবাদ করতে পারবে।
কোটচাঁদপুর উপজেলার কৃষক নবির হোসেন জানান, এমন শিলাবৃস্টি এর আগে কখনও দেখেনি। হঠাৎ এমন বৃষ্টি সাথে শিলায় সবধরনের ফসল ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। তার ভূট্টার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আগে বিঘাপ্রতি ৫০ মন হারে ভূট্টা হতো, এখন বিঘায় ১৫মন করে হতে পারে বলে মনে করেন তিনি।
সরদ উপজেলার বৈডাঙ্গা গ্রামর কৃষক শাহাব উদ্দীন জানান, গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে ভূট্টা ক্ষেতের অনেক ক্ষতি হয়েগেছে, বিঘায় ২৫ থেকে ৩০ মন করে ফলন কমবে বলে জানান তিনি।
কৃষক আফসার উদ্দীন জানান, শীতমৌসুমে ঘণঘণ বৃষ্টি ও শিলা এর আগে কখনো দেখা যায়নি। এই বৃষ্টির কারনে রবিশস্য অনেক ক্ষতি হয়েছে। কখনো শীত, গরম, শিলাবৃষ্টির কারনে মসুরি ও গমের দানা পুষ্টি হবেনা মারা যেতে পারে। যেখানে বিঘাপ্রতি মসুরি ৮ থেকে ১০ মন করে ফলতো সেখানে এই আবহাওয়া এবং প্রকৃতিক দুর্যোগের কারনে মসুরি বিঘাপ্রতি ২ মন করে ফলন হবার সম্ভবনা রয়েছে। তবে সরকার যদি দ্রুত প্রণোদনার ব্যবস্থা করে, তাহলে কৃষক তার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবে।ঝিনাইদহ কৃষি সম্প্রাসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ আজগর আলী বলেন, গতকালের শিলাবৃষ্টির কারনে ধানের তেমন ক্ষতি না হলেও অন্যান্য ফসলের অনেক ক্ষতি হয়েছে। এখনও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সঠিক ভাবে নিরুপণ করা যায়নি।
এপর্যন্ত যে তথ্য এসেছে তারমধ্যে ৫২ হাজার ১শত ২২ হেক্টর জমির ফসলের মধ্যে গম, ভূট্টা, মসুর, পেঁয়াজ, কলাসহ ৭শত ১৮ হেক্টর জমির বিভিন্ন ধরণের ফলসের এই দুর্যোগে আক্রান্ত হয়েছে। এবছর ১৮ হাজার হেক্টর জমিতে ভূট্টার আবাদ হয়েছে। দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যেই কৃষক ফসলগুলো ঘরে তুলতো। কিন্তু হঠাৎ করেই ঘূর্ণিঝড়, শিলাবৃষ্টি ও অতিবৃষ্টির কারনে চাষিদের বেশি ক্ষতি হয়েছে ভূট্টা, গম এবং মসুরিতে। এই প্রকৃতিক দুর্যোগ থেকে বাঁচতে হলে আল্লাহর কাছে পানাহ্ ছাড়া কোন উপায় নাই। আগামীতে কয়েক দিনের ভীতরে খরিব-১ মৌসুম সুরু হবে, সরকার কৃষিতে যে ব্যাপক প্রণোদনা দেয় এই প্রকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকে প্রণোদনা দেওয়া হবে।
জেলা প্রতিনিধি, ঝিনাইদহ\